থেমে নেই শিশু নির্যাতন
সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো একটার পর একটা শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে দেশে। সেসব ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তদের আইনের হাতে সোপর্দ করার পর কয়েকটি ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে।
কিন্তু তার পরও থেমে নেই শিশু নির্যাতনের ঘটনা। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ভুঁইয়ারহাট এলাকায়। ল্যাপটপ থেকে একটি গেমস ফোল্ডার মুছে ফেলার সন্দেহে চার বছর বয়সী শিশু পিয়াসকে বস্তায় ভরে নির্মমভাবে নির্যাতন করে একটি সুপারিবাগানে ফেলে রাখা হয়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। শিশুটির চোখে ও মুখে বেশ কিছু জখম রয়েছে বলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পিয়াসকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আমাদের দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনা অহরহই ঘটছে। সামান্য কারণে শিশুদের আঘাত করা হচ্ছে। শিশু রাকিব ও রাজন হত্যাকা- দেশে আলোড়ন তুলেছিল। কিন্তু কোনোভাবেই শিশু নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। সমাজ দিন দিন অধঃপতনের খাদে নেমে যাচ্ছে বলেই শিশুর নিরাপত্তা সুরক্ষিত নয়। এমনকি সমাজও প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলোও যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। বড় হয়ে যে শিশুরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের হাল ধরবে, তাদের সঙ্গে কেন এ নিষ্ঠুর আচরণ? শিশু পিয়াস হয়তো সবার কাছে আদরের ছিল। তাকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ যে তরুণের বিরুদ্ধে, সে-ও তাকে আদর করত বলেই ল্যাপটপে গেম খেলতে দিত। কিন্তু একটি গেমস ফোল্ডার মুছে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি তরুণটি। প্রায় দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বস্তায় ভরে পিটিয়ে আহত করেছে। এ জাতীয় সব অপরাধের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। সমাজে নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়ন বেড়েছে। সহিংসতা হচ্ছে কথায় কথায়; কিন্তু পিয়াসের মতো অবুঝ শিশুরা কেন আক্রান্ত হবে? এ সমাজ কবে শিশুর জন্য নিরাপদ হবে? মানুষের সহজাত মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সর্বত্রই অসহিষ্ণুতা দেখা দিয়েছে। এরই প্রভাব পড়ছে সমাজ মানসে। ফলে পিয়াসের মতো শিশুরা আক্রান্ত হয়। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। কোন পথে সে সমাধান আসতে পারে, তা সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।